আবদুল হালিম দুলাল : “বসার বেঞ্চ নাই মাটিতে বসে ক্লাশ করতে কোমর-পিঠে ব্যাথা হয়, ছাদের প্লাষ্টার (পলেস্তরা) ভেঙ্গে প্রায়ই মাথায় পরে, সব সময় আতংকে থকতে হয়, বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়, দরজা-জানালা নাই বাতাসে বই-খাতা উড়ে যায়, ঠিকমত ক্লাশ হয় না এ কেমন স্কুল ? সরকারকি আমাদের দেখে না ?” পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ৩৮ নং ঘোপখালী (২) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষোভের সাথে একের পর এক প্রশ্ন গুলো করছিল। মঠবাড়িয়া-মিরুখালী-ভান্ডারিয়া সড়কের পাশে অবস্থিত জীর্ণ-শীর্ণ স্কুলটি যেন প্রদ্বীপের নিচে অন্ধকারের মত।
সরেজমিনে ১৯৭০ সালে ১.৭ একর জমিেিত প্রতিষ্ঠিত ঘোপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে স্তম্ভিত হওয়ার উপক্রম। ১৯৯৫ সালে নির্মিত জীর্ণ-শীর্ণ ভবনটি যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। দেয়ালের পলেস্তরা খসে এখন ইটও খসে পড়ছে, পিলারের পলেস্তরা খসে মরিচা ধরা রড দেখা যায়, ছাদের ভীমের অবস্থাও একই, ভবনের ১টি ছোট কক্ষসহ ৪টি কক্ষ দেখে শ্রেনী কক্ষ মনে হয়নি। শিক্ষকদের কক্ষটি ছাড়া অন্য ৩টি কক্ষে কোন দরজা-জানালা নাই। শ্রেণী কক্ষে বেঞ্চ, চেয়ার ও টেবিল নাই। শিক্ষকদের কক্ষে ২টি টেবিল ও ৩টি চেয়ার আছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মেঝেতে বসে ক্লাশ করে। কাগজে বিদ্যালয়ে (৬ শ্রেনীতে) শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০ জন, শিক্ষক আছে ৪ জন দপ্তরি এখনও নিয়োগ হয়নি। ১০ মাসেও মেয়দোত্তীর্ণ কমিটি গঠন হয়নি। নেই কোন শৌচাগার।
৪তুর্থ শ্রেণীর ফারজানা ও সুমন তয় শ্রেণীর সাকিব, রাবেয়া ও রাফসানা জানায় প্রায় ১ মাস ধরে মেঝেতে বসে ক্লাশ করতে হচ্ছে। ৫ম শ্রেণীর আলাউদ্দিন, বিউটি, কারিমা ও লাবনী জানায় প্রাধন শিক্ষক প্রায়ই তাদের ক্লাশ করেন না।
সহকারী শিক্ষিকা হাবিবা সুলতানা জানান, কিছু দিন পূর্বে ৫ম শ্রেণীর ক্লাশ নেয়ার সময় দরজা ভেঙ্গে পড়লে তিনি ও ২ শিশু শিক্ষার্থী অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) এর ২বার ৮০ হাজার টাকা বরাদ্ধ আসলেও তা কোথায় ব্যায় হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে জানান। সহকারী শিক্ষিকা নাজমিন আক্তার জানান, প্রধান শিক্ষক প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন, শিশুদের নিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আতংকে থাকি। সহকারী শিক্ষক ছারওয়ার হোসেন জানান, ৫ মাস হয় এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি এখন পর্যন্ত বসার চেয়ার পাইনি ।
বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসিন্দা আঃ রব খন্দকারসহ একাধিক অভিভবাক জানান, ৪০ হাজার করে ২ বারে স্লিপের ৮০ হাজার এবং ১ টি রেইনট্রি (গাছ) বিক্রির সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল না বানিয়ে প্রধান শিক্ষক আত্মসাত করেছেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও অভিযোগের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলি হাং জানান, প্রধান শিক্ষক শফিক কোন নির্দেশনা মানেননা। ফেব্রুয়ারী মাসে অনুপস্থিতির কারনে তার ৬ দিনের বেতন কাটা হয়েছে। বিদ্যালয়টি উন্নয়নের জন্য প্রধান শিক্ষকই বড় সমস্যা বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমীন প্রধান শিক্ষক শফিকুলের বিরুদ্ধে আনিত অবিযোগ স্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গত ৩১.১০.২০১৭ তারিখ (স্মারক নং-৭৩৯) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করা হয়েছে। বিদ্যালয় ভবন নির্মান এবং আসবাবপত্রের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।