মোঃ রফিকুল ইসলাম সুজন : উল্লাসে মাতোয়ারা তখন গোটা জাতি। শহর, নগর, গ্রামগঞ্জে শুধুই বিজয় মিছিল। এ যেন এক বাঁধভাঙা উল্লাস। কারণ বিজয়ের স্বাদ যে বড়ই মধুর, বড়ই আনন্দের। আর সেই বিজয় যদি হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তাহলে তো কথাই নেই। বাঙালি জাতির সেই গর্ব আর অহংকার ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কথা বলছি। বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত জাতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করা। তাই বাংলাদেশ সরকার তখন খাদ্য ও পুনর্বাসনের জন্য এক উদ্যোগ গ্রহণ করে যাকে বলা হতো আর আর কমিটি অর্থাত্ রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কমিটি। প্রত্যেক ইউনিয়নে আর আর কমিট গঠন করা হয়। সেই কমিটির মহান দায়িত্ব পালনের যার সুযোগ হয়েছিল সে রকম একজন মহান মানুষের জীবনী নিয়ে আজকের লেখা।
নাম তার মরহুম আঃ ওহাব মিয়া বেপারী। পিতা মরহুম তাহের উদ্দিন মিয়া বেপারীর ঘরে ১৯৩৫ সালে মঠবাড়িয়া থানার ধানীসাফা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে তার জন্ম। সকাল দেখে যেমন বিকাল বোঝা যায় তেমনি তার শিশুকাল, কৈশোরকালই জানান দিয়েছিল ছোট্ট ওহাবের আগামীর দিনগুলোর কথা। নেতৃত্বসুলভ গুণাবলি তার চরিত্রের একটি বড় দিক ছিল। পড়াশুনায় খুব বেশি এগুতে পারেননি। কর্মজীবনে সুন্দরবনের গাছের ব্যবসা করতেন। আর আর কমিটির মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে তার সখ্য ও ভালোবাসা তৈরি হয়। সেই ভালোবাসা তিনি আজীবন মানুষকে দিয়ে গেছেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত তিনি ধানীসাফা ইউনিয়নের আর আর কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর জনগণের সরাসরি ভোটে তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ধানীসাফা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মোট প্রায় ৩৪ বছর তিনি এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, দলের প্রতি আনুগত্য, সত্যিকার দেশপ্রেম, নেতৃত্বের অসীম গুণ ও দলীয় কর্মীদের সাথে সুম্পর্কের কারণে তার বিকল্প হিসাবে কাউকে ভাবার সুযোগ পাননি উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা। আজীবন আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করে গেছেন। গোটা মঠবাড়িয়ার মধ্যে পুরাতন ও পিওর আওয়ামী লীগ পরিবার হিসেবে যে দশটি পরিবারের খ্যাতি রয়েছে তার মধ্য মরহুম ওহাব চেয়ারম্যানের পরিবার অন্যতম। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি কত যে কষ্ট আর কত যে সময় নষ্ট করছেন তার হিসাব কে রাখে! তার সুযোগ্য পুত্র মিয়া মোঃ ফারুক বর্তমান আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
১৯৯৯ এই সালে এই গুণিজন অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে এই ধরণী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আক্ষরিক অর্থে বিদায় নিলেও তার কর্ম, চরিত্র ও ব্যবহার তাকে আমাদের মাঝে অমর করে রেখেছে, জীবন্ত করে রেখেছে আমাদের নয়ন সমুখে। কবির ভাষায়”নয়নসমুখে তুমি নাই, নয়ন মাঝে নিয়েছ যে ঠাঁই। মরহুমের জন্য আল্লাহর দরবারে সুউচ্চ মর্যাদা কামনা করছি।